গসাগু কাকে বলে

গসাগু কাকে বলে নিয়ে জানতে হলে আগে কয়েকটা টার্ম সম্পর্কে আগে জানতে হবে।

গুণনীয়ক (Factor)

কোনো সংখ্যার ভাজক বা উৎপাদক গুলোকে গুণনীয়ক বলে। যেমন- ৩০ এর গুণনীয়ক হচ্ছে,

৩০ = ১, ২, ৩, ৫, ৬, ১০, ১৫, ৩০

যেখানে ৩০ এর সবচেয়ে ছোট গুণনীয়ক ১ এবং সবচেয়ে বড় গুণনীয়ক ৩০। আরো কিছু সংখ্যার গুণনীয়ক দেখি-

২০ = ১, ২, ৪, ৫, ১০, ২০

১০০ = ১, ২, ৪, ৫, ১০, ২০, ২৫, ৫০, ১০০

এসব উদাহরণ থেকে বলা যায়-

১ হচ্ছে প্রতিটা সংখ্যার সবচেয়ে ছোট গুণনীয়ক

প্রতিটা সংখ্যার সবচেয়ে বড় গুণনীয়ক হচ্ছে ঐ সংখ্যাটা নিজেই।

 

সাধারণ গুণনীয়ক (Common Factor)

Common কথাটার মানে হচ্ছে মিল বা সাদৃশ্যতা। অর্থাৎ দুটো বা তার বেশি সংখ্যার যেসব ভাজক বা উৎপাদকগুলো একই থাকবে তারাই হচ্ছে সাধারণ গুণনীয়ক। যেমন ২০, ৩০ ও ১০০ এর গুণনীয়কদের দেখি-

২০ = ১, ২, ৪, ৫, ১০, ২০

৩০ = ১, ২, ৩, ৫, ৬, ১০, ১৫, ৩০

১০০ = ১, ২, ৪, ৫, ১০, ২০, ২৫, ৫০, ১০০

এখানে, ২০ ও ১০০ এর সাধারণ উৎপাদকগুলো হচ্ছে- ১, ২, ৫, ১০ এই চারটা।

 

গসাগু কাকে বলে

গসাগু কাকে বলে? দুটো বা তার বেশি সংখ্যার মধ্যে থাকা সাধারণ গুণনীয়কদের মাঝে যেটার মান সবচেয়ে বেশি তাকে গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক বা সংক্ষেপে গসাগু বলে বলে। যেমন ২০, ৩০ ও ১০০ এর মাঝে সাধারণ উৎপাদক গুলোর মধ্যে ১০ এর মান সবচেয়ে বেশি। তাই এই তিনটি সংখ্যার গসাগু হচ্ছে ১০।

 

গসাগু নির্ণয়ের পদ্ধতি

ভাগ পদ্ধতি

যে দুটো সংখ্যার গসাগু বের করতে হবে তাদের মাঝে ছোট সংখ্যাটি দিয়ে বড় সংখ্যাটিকে ভাগ করতে হবে। এখানে আবার দুটো কন্ডিশন-

1) ভাগ করার পর যদি ভাগশেষ না থাকে তবে ছোট সংখ্যাটাই হবে লসাগু। যেমন-

১২ ও ২৪ এর লসাগুর ক্ষেত্রে, ২৪ ÷ ১২ = কোনো ভাগশেষ নেই, তাই ১২ হচ্ছে এদের গসাগু।

2) ভাগ করার পর যদি ভাগশেষ থাকে তবে সেটাকে দিয়ে ছোট সংখ্যাটাকে ভাগ করতে হবে। তারপর যদি নতুন ভাগশেষ না আসে তবে আগের ভাগশেষটাই হবে গসাগু। যেমন,

২৪ ও ৬০ এর গসাগুর ক্ষেত্রে ৬০ ÷ ২৪ করলে ১ম ভাগশেষ আসে = ১২। এবার এই ভাগশেষ দিয়ে ২৪ কে ভাগ করলে ২৪ ÷ ১২ = কোনো নতুন ভাগশেষ বা ২য় আসে না। তাই আগের ভাগশেষ ১২ হচ্ছে ২৪ ও ৬০ এর গসাগু।

কিন্তু ২৪ ÷ ১২ করার পর যদি ৩য় কোনো ভাগশেষ আসতো তবে সেটাকে দিয়ে আবার ২য় ভাগশেষকে ভাগ করাতে হতো।

গসাগু কাকে বলে ও সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে গসাগু নির্ণয়

গসাগু কাকে বলে সেটা নিয়ে আমরা আপাতত জানলাম। এই পদ্ধতিতে কয়েকটা সংখ্যা দেওয়া থাকলে তাদের প্রত্যেককে মৌলিক সংখ্যা গুলো দিয়ে ভাগ করে করে তাদের ক্ষুদ্রতম মানে নিয়ে আসতে হবে। তখন যে মৌলিক সংখ্যা গুলো দিয়ে তারা সবাই ভাগ যায়, তাদেরকে গুন করলেই গসাগু বের হয়ে যাবে।

যেমন- ২৪ ও ৩৬ এর গসাগু বের করার ক্ষেত্রে নিচের কম্বিনেশনটা দেখো-

লসাগু কাকে বলে

এখানে ২৪ ও ৩৬ কে পর পর ২, ২ এবং ৩ মৌলিক সংখ্যা দিয়ে একই সময় ভাগ করা যায়। কিন্তু সবশেষে তাদের মধ্যে যথাক্রমে ২ ও ৩ বাকি থাকে, যাদেরকে ১ ছাড়া আর কোনো মৌলিক সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা যায় না। তাই ২৪ ও ৩৬ এর গসাগু হবে = ২ x ২ x ৩ x ১ = ১২।

গসাগু যখন ১

যদি দুটো বা তার বেশি সংখ্যার উৎপাদক গুলো এমন হয় যে তাদের মাঝে ১ ছাড়া আর কোনো সংখ্যা Common থাকে না, তখন তাদের গসাগুর মান ১ হয়। যেমন, ৪৯ এবং ৬০ উৎপাদক গুলো হচ্ছে-

৪৯ = ১, ৭, ৪৯

৬০ = ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ১০, ১২, ১৫, ২০, ৩০, ৬০

এদের মাঝে ১ বাদে আর কোনো সাধারণ উৎপাদক নেই, তাই এদের গসাগু = ১।

d) দুটো সংখ্যার মাঝে যেটা গুন হিসেবে থাকে সেটাই গসাগু হয়। অর্থাৎ ধরা যাক দুটো সংখ্যা 5x এবং 9x। এদের মাঝে x গুন হিসেবে আছে, তাই x হচ্ছে এদের গসাগু। বাস্তব উদাহরণ- ৪৯ এবং ৬৩ এর ক্ষেত্রে,

৪২ = ৭ x ৬

৬৩ = ৭ x ৯

এদের মাঝে ৭ দুটো সংখ্যাতেই গুন হিসেবে আছে। তাই ৭ হচ্ছে এদের গসাগু।

e) সমানভাবে ভাগ করে দেওয়া বোঝাতে গসাগু করা হয়। অর্থাৎ কোনো প্রশ্নে যদি ভিন্ন সংখ্যক ভিন্ন ভিন্ন বস্তুকে অনেকগুলো মানুষ / ছাত্র-ছাত্রী / সদস্যদের মাঝে সমানভাবে ভাগ করে দেওয়ার কথা বলে, তবে সেই বস্তুর সংখ্যা গুলোর গসাগু বের করলেই হবে।

 

যেসব অংক এই টেকনিকে করা যাবে

a) কোন বৃহত্তম সংখ্যা দ্বারা ৫৩, ৯৩ এবং ১৮৩ কে ভাগ করলে কোনো ভাগশেষ থাকবে না?

সমাধান : এই সংখ্যা তিনটির গসাগু বের করলেই সেটা উত্তর হবে।

b) কতজন মেয়ের মাঝে ১২৫ টি লেবু, ১৪৫ টি কমলা এবং ১৬৫ টি আম সমানভাবে ভাগ করে দেওয়া যাবে?

সমাধান : সংখ্যা তিনটার গসাগু বের করলেই হবে।

c) একটি লোহার পাত ও একটি তামার পাতের দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ৬৭২ সেমি এবং ৯৬০ সেমি। পাত দুটো থেকে কেটে নেওয়া একই মাপের সবচেয়ে বড় টুকরার দৈর্ঘ্য কত হবে?

সমাধান : সংখ্যা দুটোর গসাগু বের করলেই হবে।

d) দুটো ড্রামে যথাক্রমে ৮৬৮ লিটার ও ৯৮০ লিটার দুধ ধরে। সবচেয়ে বড় মাপের কত লিটার পাত্র দ্বারা দুটো ড্রামের দুধ পূর্ণসংখ্যক বার মাপা যাবে?

সমাধান : সংখ্যা দুটোর গসাগু বের করলেই হবে।

e) একটি আয়তাকার ঘরের দৈর্ঘ্য ৩০ মি., প্রস্থ ১২ মি.। আরেকটা আয়তাকার ঘরের দৈর্ঘ্য ২০ মি., প্রস্থ ১৫ মি.। সবচেয়ে বড় কত ক্ষেত্রফলের কাঠের টুকরা দিয়ে উভয় ঘরের মেঝে পুরোপুরিভাবে ঢেকে ফেলা যাবে?

সমাধান : সংখ্যা দুটোর গসাগু বের করলেই হবে।

 

গসাগু সংক্রান্ত সমস্যা

প্রত্যেকবার একটা সংখ্যা অবশিষ্ট থাকলে

এসব অংকে কিছু সংখ্যা দেওয়া থাকে এবং বলা হয় কোন বৃহত্তম সংখ্যা দিয়ে তাদেরকে ভাগ করলে প্রতিবার একটা বিশেষ সংখ্যা অবশিষ্ট থাকবে।

তাই এই টাইপের অংকে আমরা সেই সংখ্যা গুলো থেকে অবশিষ্ট থাকা বিশেষ সংখ্যাকে বিয়োগ করবো, পরে সেই বিয়োগফল গুলোকে গসাগু করলে উত্তর পাওয়া যাবে।

উদাহরণ : কোন বৃহত্তম সংখ্যা দিয়ে ১০২ ও ১৮৬ কে ভাগ করলে প্রত্যেকবার ৬ অবশিষ্ট থাকবে?

প্রথম কাজ, ১০২ ও ১৮৬ থেকে ৬ কে বিয়োগ করা-

১০২ – ৬ = ৯৬

১৮৬ – ৬ = ১৮০

এবার ৯৬ ও ১৮০ কে গসাগু করলে তার মান হবে = ১২। তাই ১২ হচ্ছে আমাদের সেই বৃহত্তম সংখ্যা।

পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-

www.youtube.com/crushschool

ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-

www.facebook.com/groups/mycrushschool