তাপ কি সেটা নিয়ে আমরা এখানে জানবো। আমরা দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন প্রকার শক্তির সঙ্গে পরিচিত। যেমন যান্ত্রিক শক্তি, তড়িৎ শক্তি, রাসায়নিক শক্তি ইত্যাদি। বিভিন্ন প্রকার শক্তির ন্যায় তাপও এক প্রকার শক্তি। শক্তির নিত্যতা সূত্র তাপের বেলায়ও প্রযোজ্য। যেমন অন্য রকম শক্তি থেকে সমতুল্য তাপ পাওয়া যায়, আবার তাপকেও অন্য প্রকার শক্তিতে রূপান্তরিত করা যায়।
তাপ কি এর উত্তর হচ্ছে, তাপ হলো এক প্রকার শক্তি যা কোনো বস্তুতে প্রয়োগ বা গমন করলে বস্তুটির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং বর্জন করলে তাপমাত্রা হ্রাস পায়। অবশ্য মনে রাখতে হবে যে বস্তুর অবস্থার পরিবর্তনের সময় তাপ দিলেও তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় না। দুটি ভিন্ন তাপমাত্রার বস্তুর মধ্যে পরিবাহক দ্বারা সংযোগ দিলে দেখা যায় তাপ উচ্চ তাপমাত্রার বস্তু হতে নিম্ন তাপমাত্রার বস্তুতে গমন করছে। এটাই তাপের স্বাভাবিক ধর্ম। উপরের আলোচনা থেকে আমরা তাদের নিম্নরূপ সংজ্ঞা দিতে পারি।
মহাবিশ্বে তাপ এক প্রকার শক্তি যা উচ্চ তাপমাত্রার বস্তু হতে নিম্ন তাপমাত্রার বস্তুতে তাপমাত্রার পার্থক্যের কারণে পরিবহণ, পরিচলন এবং বিকিরণ পদ্ধতিতে গমন করে।
তাপ কি ও তাপের বিভিন্ন মতবাদ
গোড়া হতে ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত বিজ্ঞানের ইতিহাস আলোচনা করলে দেখা যায় যে, তাপের প্রকৃতি ব্যাখ্যা করার জন্য দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী মতবাদ প্রচলিত আছে, যথা—
১। ক্যালরিক মতবাদ (Caloric theory) এবং
২। যান্ত্রিক বা গতি মতবাদ বা আধুনিক মতবাদ (Mechanical or Dynamical or Modern theory)
ক্যালরিক মতবাদের বিভিন্ন ত্রুটি থাকায় এই মতবাদ প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এখানে তাপের আধুনিক মতবাদ আলোচিত হল।
যান্ত্রিক বা গতি মতবাদ বা আধুনিক মতবাদ
1849 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী ড. জুল (Joule) তাপের এই মতবাদ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণ করেন যে, তাপ এক প্রকার শক্তি এবং তাপ ও যান্ত্রিক শক্তির মধ্যে একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। তাপের গতি মতবাদ অনুসারে প্রত্যেক বস্তুর কণাগুলো কম-বেশি গতিশীল। অতএব কণাগুলো গতিশক্তির অধিকারী।
কণাসমূহের এই গতিশক্তি তাপ শক্তিতে পরিণত হয় অর্থাৎ তাপ গতিরই রূপান্তর মাত্র। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, দুটি বস্তুকে একত্রে ঘষলে এদের অণুগুলো সজোরে কম্পিত হয়। কম্পমান অণুগুলোর গতিশক্তি তাপ শক্তিতে পরিণত হয়। অতএব উৎপন্ন তাপের মূল উৎস কাজ বা যান্ত্রিক শক্তি। সুতরাং সিদ্ধান্ত করা যায় যে, তাপ প্রবাহী নয়, এটি বস্তুর গতিশীল কণাসমূহ কর্তৃক প্রাপ্ত এক প্রকার শক্তি। যেহেতু তাপের উৎসই হলো কাজ, অতএব কাজ W ও তাপ H পরস্পরের সমানুপাতিক। অর্থাৎ –
W ≈ H
তাহলে তাপ কি সেটা নিয়ে পরিষ্কার একটা ধারণা পাওয়া গেলো।