আয়নিক বন্ধন কাকে বলে

আয়নিক বন্ধন কাকে বলে

আমাদের প্রথমেই জানতে হবে আয়নিক বন্ধন কাকে বলে। কোনো কোনো মৌলের পরমাণুর শেষ কক্ষপথে 1, 2 অথবা 3টি ইলেকট্রন থাকে, যা পরমাণুগুলো সহজে ত্যাগ করতে পারে। এ ধরনের মৌল হচ্ছে ধাতু। অপরদিকে কোনো কোনো মৌলের পরমাণুর শেষ কক্ষপথে 5, 6 অথবা 7টি ইলেকট্রন থাকে। তারা সহজে 3, 2 বা 1টি ইলেকট্রন গ্রহণ করে অষ্টক পূরণ করতে পারে। এ ধরনের মৌল হচ্ছে অধাতু৷ ১৯১৬ সালে কোসেল (Walther Kossel) মত প্রকাশ করেন যে-

ধাতু ও অধাতুর মধ্যে বিক্রিয়ার সময় ধাতু পরমাণু ইলেকট্রন ছেড়ে দিয়ে ধনাত্মক আধানযুক্ত আয়নে পরিণত হয় এবং অধাতু পরমাণু ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক আধানযুক্ত আয়নে পরিণত হয়। বিপরীত আধানের মধ্যে আকর্ষণ ঘটে, তাই এভাবে সৃষ্ট ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আয়ন পরস্পরকে আকর্ষণ করে। এ আকর্ষণের ফলে যে বন্ধনের সৃষ্টি হয়, তাকে আয়নিক বন্ধন বলে। যে যৌগে আয়নিক বন্ধন বিদ্যমান, তাকে আয়নিক যৌগ বলা হয়।

আয়নিক বন্ধন কাকে বলে এর উদাহরণ

এবার আমরা একটা উদাহরণের মাধ্যমে জানবো আয়নিক বন্ধন কাকে বলে। সোডিয়াম ধাতুর পরমাণুতে 11টি ইলেকট্রন আছে। এর ইলেকট্রন বিন্যাস 2, 8, 1, অর্থাৎ এর শেষ কক্ষপথে একটি মাত্র ইলেকট্রন আছে। সোডিয়ামের কাছাকাছি থাকা নিষ্ক্রিয় গ্যাস নিয়নের ইলেকট্রন বিন্যাস 2, 8। সোডিয়াম পরমাণু তার শেষ কক্ষপথের ইলেকট্রনটি ত্যাগ করলে নিয়ন গ্যাসের ইলেকট্রন বিন্যাস অর্জন করতে পারে ৷ পরমাণুটি পরিবর্তিত অবস্থায় যথেষ্ট স্থিতিশীলতা অর্জন করে। একটি ইলেকট্রন ত্যাগ করায় একটি ধনাত্মক আধানযুক্ত Na+ আয়নের উৎপত্তি হয়।

অপরদিকে ক্লোরিন পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাস হচ্ছে 2, 8, 7। এর সর্বশেষ কক্ষপথে 7টি ইলেকট্রন আছে। ক্লোরিনের কাছাকাছি নিষ্ক্রিয় গ্যাস আর্গনের ইলেকট্রন বিন্যাস হচ্ছে 2, 8, 8। ক্লোরিন পরমাণু একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করলে তার ইলেকট্রন বিন্যাস হয় 2, 8, 8, যেটা আর্গনের অনুরূপ হয়। এ অবস্থায় তার ইলেকট্রন বিন্যাস যথেষ্ট স্থিতিশীলতা অর্জন করে। একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করার কারণে ক্লোরিন পরমাণু নিজেই ঋণাত্মক আধানযুক্ত CI আয়নে রূপান্তরিত হয়। এ বিপরীত আধানযুক্ত আয়নগুলো পরস্পরকে আকর্ষণ করে এবং এভাবে সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) যৌগের সৃষ্টি হয়। সোডিয়াম ক্লোরাইড একটি আয়নিক যৌগ।

আয়নিক বন্ধন কাকে বলে

আয়নিক বন্ধন এর আরেকটা উদাহরণ

ম্যাগনেসিয়াম যখন বাতাসে জ্বলে তখন ম্যাগনেসিয়াম ধাতু অক্সিজেন গ্যাসের সাথে বিক্রিয়া করে ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড উৎপন্ন করে। এ সময়ও একইভাবে ইলেকট্রনের আদান-প্রদান ঘটে। ম্যাগনেসিয়ামের পারমাণবিক সংখ্যা 12, এর ইলেকট্রন বিন্যাস 2, 8, 2। এর শেষ কক্ষপথে 2টি ইলেকট্রন আছে। এ 2টি ইলেকট্রন ত্যাগ করলে Mg2+ আয়নের সৃষ্টি হয়, যার ইলেকট্রন বিন্যাস 2, 8, নিষ্ক্রিয় গ্যাস নিয়নের অনুরূপ। অপরদিকে অক্সিজেনের পারমাণবিক সংখ্যা 8 এবং ইলেকট্রন বিন্যাস 2,6। ম্যাগনেসিয়াম পরমাণু যে 2টি ইলেকট্রন ত্যাগ করে, তা গ্রহণ করে 02- আয়নের সৃষ্টি হয়, যার ইলেকট্রন বিন্যাস হয় 2, 8। অর্থাৎ নিষ্ক্রিয় গ্যাস নিয়ন এর অনুরূপ হয় এই ইলেকট্রন বিন্যাস। এখানে সৃষ্ট Mg2+ ও O2- আয়ন দুটো বিপরীত আধানযুক্ত হওয়ায় পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড (MgO) এর সৃষ্টি হয়। সুতরাং এটি একটি আয়নিক যৌগ।

আয়নিক বন্ধন

আয়নিক বন্ধন এর বৈশিষ্ট্য

উল্লেখ্য যে, রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এভাবে ইলেকট্রনের আদান-প্রদান বা পুনর্বিন্যাস ঘটে কিন্তু এতে পরমাণুর নিউক্লিয়াসে কোনরূপ পরিবর্তন ঘটে না। অর্থাৎ নিউক্লিয়াসের প্রোটন সংখ্যার কোনো পরিবর্তন হয় না। আয়নিক বন্ধন খুব শক্তিশালী বন্ধন। এ বন্ধন ছিন্ন করতে প্রচুর শক্তি ব্যয় করতে হয়। যেমন সোডিয়াম ক্লোরাইডকে 1465°C উষ্ণতায় উত্তপ্ত করলে এ বন্ধন পুরোপুরি ছিন্ন হয় এবং সোডিয়াম ক্লোরাইড বাষ্পীভূত হয়। 801°C তাপমাত্রায় আয়নসমূহের কম্পন এত বৃদ্ধি পায় যে, এক জোড়া আয়ন (Na+CI) পার্শ্ববর্তী আয়নের আকর্ষণ ছিন্ন করে পরস্পরের নিকটে থেকে মুক্তভাবে বিচরণ করে যাকে তরল অবস্থা বলে। কঠিন অবস্থায় অসংখ্য আয়ন একত্রিত হয়ে বিশেষ ধরনের জালিকা (crystal lattice) তৈরি করে। তাতে বিপরীতধর্মী আয়ন যথাসম্ভব পরস্পরের নিকটে এবং সমধর্মী আয়ন যথাসম্ভব পরস্পর হতে দূরে অবস্থান করে। তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম আয়নিক বন্ধন কাকে বলে।

পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-

www.youtube.com/crushschool

ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-

www.facebook.com/groups/mycrushschool