তাপমাত্রা কাকে বলে

তাপমাত্রা কাকে বলে এর উত্তর জানাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমাদের জন্য। তাপ ও তাপমাত্রা পদার্থবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পদার্থের ভৌতিক অবস্থা প্রকাশে তাপমাত্রার ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জানি যে কোনো পদার্থ অসংখ্য অণুর সমন্বয়ে গঠিত হয়। এই অণুগুলোর গতিশক্তি রয়েছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি করলে গতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং কমালে গতিশক্তি হ্রাস পায়। তাপমাত্রা একটি পরিমাপযোগ্য রাশি। এখন আমরা তাপমাত্রা নিয়ে বেশ কিছু জিনিস আলোচনা করবো।

তাপমাত্রা কাকে বলে এর উত্তর কি?

গরম বা ঠাণ্ডা বোধ আমাদের সকলেরই রয়েছে। সুতরাং কোনো একটি বস্তু কী পরিমাণ গরম বা ঠাণ্ডা তার পরিমাপকে আপাতভাবে ঐ বস্তুর তাপমাত্রা বলে। অর্থাৎ আপাতভাবে বলা যায় তাপমাত্রা দ্বারা বস্তুর উত্তপ্ততার (degree of hotness) পরিমাণ বুঝায়। মনে করি দুটি বস্তু রয়েছে। একটি বস্তু A এবং অপরটি B। যদি স্পর্শ করলে মনে হয় বস্তু A বস্তু B অপেক্ষা বেশি গরম, তবে আমরা বলতে পারি বস্তু A-এর তাপমাত্রা বেশি এবং বস্তু B-এর তাপমাত্রা কম।

কিন্তু নিখুঁতভাবে তাপমাত্রার নিম্নলিখিত সংজ্ঞা দেয়া যেতে পারে- তাপমাত্রা বস্তুর একটি তাপীয় অবস্থা যা ঐ বস্তু হতে অন্য বস্তুতে তাপের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে এবং তাপ প্রবাহের অভিমুখ নির্ধারণ করে।

কোনো বস্তু ঠাণ্ডা না গরম তা স্পর্শ করে সরাসরি বুঝা যায় না, তবে অনুভব করা যায়। বিশেষ এক শক্তির কারণেই ঠাণ্ডা ও গরমের অনুভূতি হয়, এ বিশেষ শক্তিকে বলা হয় তাপ

তাপমাত্রা কাকে বলে

তাপ হলো এক প্রকার শক্তি যা গরম বা ঠাণ্ডার অনুভূতি জন্মায়। তবে কোনো বস্তু কী পরিমাণ ঠাণ্ডা বা গরম তা তাপমাত্রার সাহায্যে জানা যায়। অর্থাৎ তাপমাত্রা হলো বস্তুর তাপীয় অবস্থা যা একটি স্কেলার রাশি। অতএব, তাপমাত্রা হচ্ছে বস্তুর এমন এক তাপীয় অবস্থা যা নির্ধারণ করে বস্তুটি অন্য বস্তুর সংস্পর্শে রাখলে এটি দ্বিতীয় বস্তুটিকে তাপ দেবে না দ্বিতীয় বস্তুটি হতে তাপ গ্রহণ করবে।

1690 সালে জন লক (John Locke) একটি সহজ পরীক্ষার সাহায্যে ব্যাখ্যা করেন যে, স্পর্শ অনুভূতির সাহায্যে তাপমাত্রা নির্ণয় করা যায় না। তাই তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য আমাদের যন্ত্রের প্রয়োজন। তাপমাত্রা নির্ণয়ের যন্ত্রের নাম থার্মোমিটার।

স্থির বিন্দু

থার্মোমিটারের সাহায্যে তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য তাপমাত্রার স্কেল প্রয়োজন। তাপমাত্রার স্কেল নির্ধারণের জন্য থার্মোমিটারে দুটি বিশেষ বিন্দু নির্দিষ্ট করা হয়। এদেরকে স্থির বিন্দু বলা হয়।

নিম্ন স্থির বিন্দু (Lower Fixed Point) : যে তাপমাত্রায় বিশুদ্ধ বরফ পানির সাথে সাম্যাবস্থায় থাকতে পারে অর্থাৎ প্রমাণ চাপে যে তাপমাত্রায় বিশুদ্ধ বরফ গলতে শুরু করে তাকে নিম্ন স্থির বিন্দু বা বরফ বিন্দু (Ice Point) বা গলনাঙ্ক (Melting Point) বলে। এর মান 0°C বা 273 K.

ঊর্ধ্ব স্থির বিন্দু (Upper Fixed Point) : যে তাপমাত্রায় বিশুদ্ধ পানি জলীয় বাষ্পের সাথে সাম্যাবস্থায় থাকতে পারে বা প্রমাণ চাপে যে তাপমাত্রায় বিশুদ্ধ পানি জলীয় বাষ্পে পরিণত হতে শুরু করে তাকে ঊর্ধ্ব স্থির বিন্দু বা স্টিম বিন্দু (Steam Point) বা স্ফুটনাঙ্ক (Boiling Point) বলে। এর মান 100°C বা 373 K.

ঊর্ধ্ব স্থির বিন্দু ও নিম্ন স্থির বিন্দুর মধ্যবর্তী তাপমাত্রার ব্যবধানকে মৌলিক ব্যবধান বলে।

তাপমাত্রার একক কি?

তাপমাত্রার একক হচ্ছে তিনটি। এগুলো হচ্ছে ডিগ্রি সেলসিয়াস, ফারেনহাইট এবং কেলভিন। এই একক গুলোর প্রতিটা নাম রাখা হয়েছে বিজ্ঞানীদের নাম অনুসারে। এদের মাঝে সম্পর্ক হচ্ছে- 

C / 5 = (F – 32) / 9 = (K – 273) / 5

সেলসিয়াসের আরেক নাম হচ্ছে সেন্টিগ্রেড। যেখানে 0 ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পানি বরফে পরিণত হয় এবং 100 ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পানি বাষ্পে পরিণত হয়। ঠিক একইভাবে 32 ডিগ্রী ফারেনহাইটে পানি বরফে পরিণত হয় এবং 212 ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপমাত্রায় পানি বাষ্পে পরিণত হয়। এক ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার পার্থক্য এক ডিগ্রি ফারেনহাইটের তাপমাত্রার পার্থক্যের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। সেলসিয়াস স্কেলে এক ডিগ্রি ফারেনহাইট স্কেলে এক ডিগ্রির চেয়ে 1.8 গুণ বড়।

ওদিকে কেলভিন হচ্ছে আধুনিক যুগে সর্বাধিক ব্যবহৃত একটি তাপমাত্রার একক। এটি পরম তাপমাত্রা পরিমাপে ব্যবহার করা হয় যেখানে পরম তাপমাত্রার পরিমাণ 0 K। এই একক অনুসারে পানির বরফবিন্দু এবং বাষ্পবিন্দু যথাক্রমে 273.15 কেলভিন এবং 373.15 কেলভিন। এটি অন্যান্য তাপমাত্রার একক থেকে ভিন্ন কারণ এটি দিয়ে পরম তাপমাত্রা পরিমাপ করা যায়। এই এককটিকে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক কাজে অনেক বেশি পরিমাণে ব্যবহার করা হয়। তাহলে তাপমাত্রার একক কি এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে এই কথা গুলো।

তাপমাত্রার একক কি

উষ্ণতামিতি ধর্ম ও উষ্ণতামিতি পদার্থ

কোনো বস্তু কত গরম অথবা কত ঠাণ্ডা তা স্পর্শ করে সরাসরি বুঝা যায় না, অনুভব করা যায় মাত্র। এই কারণে তাপমাত্রার তারতম্যভেদে যে পদার্থের বিশেষ কোনো ধর্ম নিয়মিতভাবে পরিবর্তিত হয় এবং যে ধর্মের পরিবর্তন লক্ষ করে সহজ ও সূক্ষ্মভাবে তাপমাত্রা নিরূপণ করা যায় সেই পদার্থ বস্তুর তাপমাত্রা পরিমাপে ব্যবহৃত হয়।

যে যন্ত্র দ্বারা বস্তুর তাপমাত্রা নির্ভুলভাবে পরিমাপ করা যায় তাকে থার্মোমিটার (Thermometer) বলে। তাপমাত্রা পরিমাপ উপযোগী পদার্থের যে সকল ধর্ম কাজে লাগানো হয়, পদার্থের ঐ ধর্মগুলোকে উষ্ণতামিতি ধর্ম বলে। তাপমাত্রা কাকে বলে এই টপিকে তোমাদের এই ধর্মটা নিয়েও জানা লাগবে।

তাহলে সহজভাবে বলা যায় তাপমাত্রা পরিমাপে উপযোগী পদার্থের যেসব ধর্ম কাজে লাগানো হয়, পদার্থের ঐ ধর্মগুলোকে উষ্ণতামিতিক ধর্ম বলে। যেমন একটি সরু কাচ নলের মধ্যে তরল পারদ স্তম্ভের দৈর্ঘ্য, স্থির আয়তনে গ্যাসের চাপ বা স্থির চাপে গ্যাসের আয়তন, পরিবাহী বা অর্ধপরিবাহীর তড়িৎ রোধ ইত্যাদি উষ্ণতামিতিক ধর্মের উদাহরণ।

উষ্ণতামিতিক পদার্থ

যেসব পদার্থের উষ্ণতামিতিক ধর্ম ব্যবহার করে থার্মোমিটার তৈরি করা হয় তাদেরকে উষ্ণতামিতিক পদার্থ বলে। যেমন- কৈশিক নলে তরল (পারদ, অ্যালকোহল) স্তম্ভ, স্থির আয়তনে বা চাপে গ্যাস, পরিবাহী বা অর্ধপরিবাহী ইত্যাদি হলো উষ্ণতামিতিক পদার্থ। বিভিন্ন পরিসরে উষ্ণতা নির্ণয়ের জন্য সুবিধা অনুযায়ী বিভিন্ন উষ্ণতামিতিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। সাধারণত উষ্ণতামিতিক পদার্থের বা তার ধর্মের উপর ভিত্তি করে থার্মোমিটারের নামকরণ করা হয়। যে যন্ত্রের সাহায্যে কোনো বস্তুর তাপমাত্রা সঠিকভাবে পরিমাপ করা যায় এবং বিভিন্ন বস্তুর তাপমাত্রার পার্থক্য নির্ণয় করা যায়, তাকে থার্মোমিটার বলে।

পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-

www.youtube.com/c/CrushSchool

ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-

www.facebook.com/groups/mycrushschool

1 Comment

Comments are closed