যে কোন গ্যাস অসংখ্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অণু দ্বারা গঠিত। অণুসমূহ সব সময় অতি দ্রুতগতিতে ইতস্তত চলতে থাকে। ফলে পরস্পরের সাথে এবং গ্যাসাধারের ভেতরের দেওয়ালের সাথে তাদের অবিরাম স্থিতিস্থাপক সংঘর্ষ চলতে থাকে। এ সংঘর্ষের মাধ্যমে অণুসমূহ গ্যাসাধারের দেওয়ালের উপর বল প্রয়োগ করে। গ্যাসাধারের দেওয়ালে প্রতি একক ক্ষেত্রফলে গ্যাস-অণুসমূহের প্রয়োগকৃত বলকে গ্যাসের চাপ বলা হয়।
আণবিক সংঘর্ষ ও সংঘর্ষ ব্যাস
গ্যাসের গতিতত্ত্বের আণবিক সংঘর্ষ বুঝতে হলে আণবিক ব্যাস, আণবিক সংঘর্ষ ব্যাস ও গড় মুক্ত পথ— এ তিনটি পদের ধারণা থাকা প্রয়োজন। গ্যাসের অণুসমূহ প্রচণ্ড দ্রুতগতিতে সরলরৈখিক পথে ইতস্তত সবদিকে ছুটাছুটি করার সময় দুটি গ্যাস অণু পরস্পরের নিকটে আসলে এক সময় এদের মধ্যে কার্যকরী বিকর্ষণ বল অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে। তখন উভয় অণু বিপরীত দিকে সরে যেতে বাধ্য হয়। এরূপ অবস্থাকে গ্যাসের আণবিক সংঘর্ষ (molecular collision) বলে। অপর কথায়, দুটি অণু সম্ভাব্য নূন্যতম দুরত্বে এসে এদের মাঝে বিকর্ষণের কারণে বিপরীত দিকে ফিরে যাওয়াকে আণবিক সংঘর্ষ বলে।
প্রতিটি আণবিক সংঘর্ষের সময় উভয় অণুর কেন্দ্রবিন্দুর ন্যূনতম দূরত্বকে সংঘর্ষ ব্যাস বলে।
সংঘর্ষ ব্যাসকে ‘σ’ (সিগমা) দিয়ে প্রকাশ করা হয়। আণবিক ব্যাস থেকে সংঘর্ষ ব্যাস একটু বড় হয়। অধিকাংশ গ্যাসের আণবিক ব্যাসের মাত্রা 2Å (অ্যাংস্ট্রম) বা 2 × 10-10 m এর কাছাকাছি হয়। অপরদিকে সংঘর্ষ ব্যাসের মাত্রা 2Å থেকে 4Å এর মধ্যে থাকে। সংঘর্ষকালীন দুটি অণু এদের আণবিক সংঘর্ষ ব্যাসের চেয়ে বেশি নিকটে আসতে পারে না।
গড় মুক্ত পথ
পর পর দুটি সংঘর্ষকালীন একটি গ্যাস অণু যতটা সরলরৈখিক পথ অতিক্রম করে ঐ দূরত্বকে গ্যাস অণুর মুক্ত পথ বলে। সকল মুক্তপথের মোট দূরত্বকে মোট সংঘর্ষ সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে মুক্ত পথসমূহের যে গড় দূরত্ব পাওয়া যায়, তাকে গড় মুক্ত পথ বলা হয়। গড় মুক্ত পথকে ‘l’ দ্বারা প্রকাশ করা হয়। স্থির তাপমাত্রায় গ্যাসের চাপ বৃদ্ধি করলে ‘l’ এর মান হ্রাস পায় ও চাপ হ্রাস করলে ‘l’ এর মান বৃদ্ধি পায়। কারণ চাপ বৃদ্ধি করলে আন্তঃআণবিক দূরত্ব হ্রাস পায়। আবার স্থির চাপে গড় মুক্ত পথ কেলভিন তাপমাত্রার সমানুপাতিক হয়।
পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
Related posts:
- আদর্শ আচরণ থেকে বাস্তব গ্যাসের বিচ্যুতির কারণ (Causes of Deviation of Real Gases from Ideal Behavior)
- গে-লুস্যাকের গ্যাসের চাপের সূত্র (Gay-Lussac’s Law of Pressure of Gases)
- গ্যাসের অণুর গতিবেগ হিসাবকরণ (Calculation of Molecular Velocities of Gases)
- গ্যাসের আংশিক চাপ ও মোল ভগ্নাংশের সম্পর্ক (Relation Between Partial Pressure and Mole Fraction of a Gas)
- গ্যাসের গতিতত্ত্ব (Kinetic Theory of Gases)
- গ্যাসের গতিতত্ত্ব থেকে গ্যাসীয় সূত্র সমূহের উপপাদন (Deduction of Gas Laws From Kinetic Theory of Gases)
- গ্যাসের গতিতত্ত্বের স্বীকার্যসমূহ কি কি?
- গ্যাসের ঘনত্বের উপর চাপের প্রভাব (Effect of Pressure on Gas Concentration)
- গ্যাসের তরলীকরণ (Liquefaction of Gases)
- গ্যাসের সূত্রসমূহ (Laws of Gases)
- ডালটনের আংশিক চাপ সূত্র (Dalton’s Law of Partial Pressure)
- ডালটনের আংশিক চাপ সূত্রের প্রয়োগ (Application of Dalton’s Law of Partial Pressure)
- তরল পদার্থের বাষ্পচাপ (Vapour Pressure of Liquid)
- বাস্তব গ্যাসের জন্য অ্যামাগা’র পরীক্ষা (Amagat’s Experiment for Real Gases)
- বাস্তব গ্যাসের প্রেষণ গুণাঙ্ক ও আদর্শ আচরণ (Compressibility Factor & ideal behavior of Real Gases)