রাষ্ট্র কাকে বলে

রাষ্ট্র কাকে বলে এটা বোঝার আগে বুঝতে হবে সামাজিক জীব হিসেবে অন্যের সঙ্গে একত্রে মিলেমিশে বসবাস করা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। প্রকৃতি ও প্রয়োজনের তাগিদে সে সমাজ গঠন করে। আর সমাজের মানুষ বিশেষ বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। তাই রাষ্ট্র এক বিশেষ ধরনের প্রতিষ্ঠান। সামাজিক সব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হচ্ছে রাষ্ট্র।

রাষ্ট্র কাকে বলে তা নিয়ে বিভিন্ন সংজ্ঞা

যুগে যুগে রাষ্ট্র কাকে বলে এটা নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিস্টটলের (Aristotle ) মতে, কতিপয় পরিবার ও গ্রামের সমন্বয়ে গঠিত সংগঠনই রাষ্ট্র। ” প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন (Woodraw Wilson) বলেন, “রাষ্ট্র হল আইনানুসারে সংগঠিত নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের একটি জনসমষ্টি।” তবে রাষ্ট্রের সবচেয়ে সুন্দর ও পূর্ণাঙ্গ সংজ্ঞা দিয়েছেন অধ্যাপক গার্নার (Garner)। তাঁর মতে, “রাষ্ট্র হল বহুসংখ্যক ব্যক্তি নিয়ে গঠিত এমন এক জনসমাজ, যা নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস করে, যা বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ হতে মুক্ত এবং যাদের একটি সুসংগঠিত সরকার আছে, যার প্রতি ঐ জনসমাজ স্বভাবতই অনুগত।”

অর্থাৎ রাষ্ট্রের এসব সংজ্ঞা থেকে বলা যায়, যে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, সংগঠিত সরকার, জনসমষ্টি এবং সার্বভৌম ক্ষমতা রয়েছে, তাকে রাষ্ট্র বলে।

রাষ্ট্র কাকে বলে

রাষ্ট্রের উপাদান

রাষ্ট্র কাকে বলে এর সংজ্ঞা ব্যাখ্যা করলেই রাষ্ট্র কি কি উপাদান নিয়ে গঠিত তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মূলত রাষ্ট্রের উপাদান চারটি। যথা- ১.জনসমষ্টি ২. নির্দিষ্ট ভূখণ্ড ৩. সরকার ও ৪. সার্বভৌমত্ব। এই চার উপাদানের সমন্বয়ে রাষ্ট্র গঠিত হয়।

১. জনসমষ্টি: জনসমষ্টি রাষ্ট্রের প্রথম উপাদান। রাষ্ট্র গঠনে জনসমষ্টি অপরিহার্য। জনহীন অরণ্যে বা জনশূন্য মরুভূমিতে কখনই রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রে জনসংখ্যা কত হবে তার কোন নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। স্যানম্যারিনো রাষ্ট্রে বার হাজারের কিছু বেশি, আর চীন প্রায় নব্বই কোটি জনসংখ্যা নিয়ে গঠিত।

২. নির্দিষ্ট ভূ-খণ্ড : এটি রাষ্ট্রের দ্বিতীয় উপাদান। যে জনসমষ্টি রাষ্ট্র গঠন করবে তাদেরকে অবশ্যই একটি ভূখণ্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে হবে। এই নির্দিষ্ট ভূখণ্ড যেকোনো আয়তনের হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ- গণচীনের ক্ষেত্রফল ৪৪.৫ লক্ষ বর্গমাইল আর হল্যান্ডের (নেদারল্যান্ডস) আয়তন মাত্র সাড়ে বার হাজার বর্গ মাইল।

৩. সরকার : রাষ্ট্র গঠনের তৃতীয় উপাদান সরকার। সরকার ব্যতীত জনসমষ্টি নির্দিষ্ট ভূ-খণ্ডে বাস করে রাষ্ট্র গঠন করতে পারে না। মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা থাকেন তাদের নিয়ে, অর্থাৎ রাষ্ট্রের আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের সমন্বয়ে সরকার গঠিত হয়। বিভিন্ন রাষ্ট্রে বিভিন্নরূপ সরকার থাকে।

৪. সার্বভৌমত্ব : রাষ্ট্র গঠনের মুখ্য উপাদান সার্বভৌমত্ব বা সার্বভৌমিকতা। এটা হল রাষ্ট্রের চরম ও চূড়ান্ত ক্ষমতা। এই ক্ষমতার জন্য জনসমষ্টি রাষ্ট্রে পরিণত হয়। তাই এই ক্ষমতা রাষ্ট্রকে অন্যান্য সংস্থা থেকে পৃথক করে। সার্বভৌম ক্ষমতার অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক দুটি দিক আছে। অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার বলে রাষ্ট্র সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর কর্তৃত্ব করে। বাহ্যিক সার্বভৌম ক্ষমতার বলে রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ ও হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত থাকে। জনসমষ্টি, নির্দিষ্ট ভূখণ্ড ও সরকার থাকা সত্ত্বেও একটি দেশ সার্বভৌম ক্ষমতা না থাকলে রাষ্ট্র বলে গণ্য হবে না। এই চারটি উপাদান নিয়ে রাষ্ট্র গঠিত। যেকোন একটি উপাদান অনুপস্থিত থাকলে রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না।

পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শত শত ভিডিও ক্লাস বিনামূল্যে করতে জয়েন করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে-

www.youtube.com/c/crushschool

ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-

www.facebook.com/groups/mycrushschool