সাধারণ মিটার স্কেলে আমরা মিলিমিটার পর্যন্ত দৈর্ঘ্য মাপতে পারি। মিলিমিটারের ভগ্নাংশ যেমন 0.2 মিলিমিটার, 0.6 মিলিমিটার বা 0.8 মিলিমিটার ইত্যাদি মাপতে হলে আমাদের ব্যবহার করতে হয় ভার্নিয়ার স্কেল। গণিত শাস্ত্রবিদ পিয়েরে ভার্নিয়ার এ স্কেল আবিষ্কার করেন। তার নামানুসারে এ স্কেলের নাম ভার্নিয়ার স্কেল।
মূল স্কেলের ক্ষুদ্রতম ভাগের ভগ্নাংশের নির্ভুল পরিমাপের জন্য মূল স্কেলের পাশে যে ছোট আর একটি স্কেল ব্যবহার করা হয় তার নাম ভার্নিয়ার স্কেল। ভার্নিয়ার স্কেলকে মিটার স্কেলের সাথে ব্যবহার করে মিলিমিটারের ভগ্নাংশ সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায়।
ভার্নিয়ার স্কেল ও এর গঠন
মনে রাখতে হবে ভার্ণিয়ার স্কেল জিনিসটা মূল বা প্রধান স্কেলের পাশে সংযুক্ত থাকে এবং প্রধান স্কেলের পাশ দিয়ে সামনে বা পেছনে সরানো যায়। ধরা যাক একটি ভার্নিয়ার স্কেলে দশটি ভাগ আছে (দশটি দাগ কাটা)। এ দশভাগ প্রধান স্কেলের নয়টি ক্ষুদ্রতম ভাগের সমান। প্রধান স্কেলের নয়টি ক্ষুদ্রতম ভাগ হল 9 মিলিমিটার বা 0.9 সেন্টিমিটার। ভার্নিয়ার স্কেলের 10 ভাগ যেহেতু প্রধান স্কেলে 9 ক্ষুদ্রতম ভাগের সমান সুতরাং ভার্নিয়ার স্কেলের ভাগগুলো প্রধান স্কেলের ক্ষুদ্রতম ভাগের চেয়ে সামান্য ছোট। প্রধান স্কেলের ক্ষুদ্রতম এক ভাগের চেয়ে ভার্নিয়ার স্কেলের এক ভাগ কতটুকু ছোট তার পরিমাণকে বলা হয় ভার্নিয়ার ধ্রুবক (Vernier constant)। একটি সহজ সূত্র দ্বারা ভার্নিয়ার ধ্রুবক নির্ণয় করা যায় তা হল, ভার্নিয়ার ধ্রুবক = S / n, যেখানে s প্রধান স্কেলের 1 ক্ষুদ্রতম ভাগের দৈর্ঘ্য এবং n ভার্নিয়ারের ভাগের সংখ্যা।
উপর্যুক্ত ক্ষেত্রে s = 1 মি. মি. এবং n = 10 ভাগ
তাই, ভার্নিয়ার ধ্রুবক = S / n
= 1 মিমি / 10
or, = 0.1 মিমি
= 0.01 সেমি
কোনো কোনো সময় ভার্নিয়ার স্কেলের 20 ভাগ প্রধান স্কেলের 19 ক্ষুদ্রতম ভাগের সমান থাকে এবং প্রধান স্কেলের এক ক্ষুদ্রতম ভাগ 1 mm এর চেয়ে কম থাকে। তখন ভার্নিয়ার ধ্রুবক পরিবর্তিত হয়ে যায়। ভার্নিয়ার ধ্রুবক নির্ভর করে প্রধান স্কেল ভার্নিয়ার স্কেলের দাগ কাটার বৈশিষ্ট্যের ওপর।
ভার্নিয়ার স্কেলের সাহায্যে পরিমাণ
মনে করা যাক, AB দন্ডের দৈর্ঘ্য বের করতে হবে। দন্ডটির A প্রান্ত প্রধান স্কেলের শূন্য (0) দাগের সাথে মিলিয়ে ভার্নিয়ারটি সামনে বা পেছনে সরিয়ে দণ্ডের B প্রান্তের সাথে মিলানো হয়। মনে করো, দণ্ডের B প্রাপ্ত স্কেলের M মি মি দাগ অতিক্রম করেছে, তাহলে এর দৈর্ঘ্য M ও (M+1) মি মি এর মাঝামাঝি। এই M মি মি এর চেয়ে বাড়তি দৈর্ঘ্য ভার্নিয়ার ব্যবহার করে বের করতে হবে। এর দৈর্ঘ্যটুকু হবে ভার্নিয়ার পাঠ।
এবার দেখতে হবে ভার্নিয়ারের কোন দাগটি প্রধান স্কেলের কোন একটি দাগের সাথে মিলেছে। যদি কোনো দাগ না মিলে থাকে তাহলে দেখতে হবে ভার্নিয়ারের কোন দাগটি প্রধান স্কেলের কোন একটি দাগের সাথে সবচেয়ে কাছাকাছি হয়েছে। ভার্নিয়ার স্কেলের এ দাগই হবে ভার্নিয়ারের সমপাতন।
ধরো, ভার্নিয়ারের V নম্বর দাগটি প্রধান স্কেলের একটি দাগের সাথে মিলেছে বা কাছাকাছি হয়েছে। সুতরাং যন্ত্রের ভার্নিয়ার ধ্রুবক VC হলে দন্ডের দৈর্ঘ্য
= প্রধান স্কেল পাঠ + ভার্নিয়ার স্কেল পাঠ
= প্রধান স্কেল পাঠ + ভার্নিয়ার সমপাতন x ভার্নিয়ার ধ্রুবক
অর্থাৎ, L = M + V x VC
ধরা যাক, দণ্ডের B প্রাপ্ত প্রধান স্কেলের 14 মি মি দাগ অতিক্রম করেছে এবং ভার্নিয়ারের 3 নম্বর দাগটি প্রধান স্কেলের একটি দাগের সাথে মিলেছে। তাহলে দন্ডের দৈর্ঘ্য হবে
L = 14 মিমি + 3 × 0.1 মি মি (ভার্নিয়ার ধ্রুবক হলো 0.1 মিমি)
= 14.3 mm
= 1.43 cm