হাইগেনের তরঙ্গতত্ত্ব আবিষ্কারের পর বহুদিন কেটে যায়। এই তত্ত্বের অনেক ভুল-ভ্রান্তি বেরিয়ে আসে। তরঙ্গতত্ত্ব আবিষ্কারের প্রায় ১২৩ বছর পর ব্রিটিশ পদার্থবিদ থমাস ইয়ং খুব সুন্দর একটা এক্সপেরিমেন্ট করেন আলোকে নিয়ে। Young’s Double Slit Experiment নামে এই পরিক্ষাটা বিশ্বখ্যাত। বাংলায় যাকে আমরা ইয়ং এর দ্বি-চির পরিক্ষা বলে চিনি। এখানে চির কথাটার অর্থ মানে হচ্ছে ছিদ্র। দ্বি-চির মানে দুটো ছিদ্র।
ইয়ং সর্বপ্রথম কিন্তু এই এক্সপেরিমেন্টটা করেননি। তার অনেক আগেই ইতালিয়ান বিজ্ঞানী ফ্রান্সিসকো মারিয়া গ্রিমান্ডি এই পরিক্ষাটা করেন যার কথা আগের লেখাতে বলেছিলাম। তিনি আসলে তার এক্সপেরিমেন্ট করেন নিউটনের আমলে। নিউটনের যুগে অন্যান্য বিজ্ঞানীদের এক্সপেরিমেন্ট গুলোকে তেমন একটা গুরুপ্তপূর্ণ ভাবা হতো না। কারন তখন নিউটন যা করতেন সেটাকেই সাধারণ লোকজন ১০০% দাম দিতেন। তাই গ্রিমান্ডি এবং তার এক্সপেরিমেন্ট সবার আড়ালেই থেকে যায়।
এবার আসি থমাস ইয়ং এর কথায়। তিনি দিনক্ষণ ঠিক করে একদিন কিছু জিনিসপত্র নিয়ে তার এক্সপেরিমেন্ট শুরু করলেন। প্রথমে একটা ঘরকে বেছে নেন তিনি যেটা একদমই অন্ধকার। সেই ঘরের মাঝখানে একটা দেয়াল বসিয়ে দেন তিনি। তাহলে আমাদের ঘরটা দুটো ভাগ হয়ে গেলো। এখানে ঘরের দুটো ভাগই কিন্তু ঘুটঘুটে অন্ধকার।
এবার ঘরের মাঝখানের দেয়ালে তিনি মেঝে থেকে সামান্য উঁচুতে দুটো ছোট ছিদ্র করলেন। ছিদ্র দুটোর মাঝখানে কিছু জায়গা গ্যাপ রাখলেন।
এবার একটা মোমবাতিকে জ্বালালেন তিনি যেটার উচ্চতা ছিদ্র দুটোর ঠিক মাঝ বরাবর ছিলো। কারন মোমের আলো দুটো ছিদ্র দিয়েই তাহলে সমানভাবে পড়বে। মোমবাতি জ্বালালে সেই আলো ছিদ্র দুটো দিয়ে গিয়ে ঘরের একদম পেছনের দেয়ালে পড়বে। তাই পেছনের দেয়ালটা পর্দা হিসেবে কাজ করছে এখানে।
ইয়ং এর মোমবাতি জ্বালানোটাই তখন একটা ইতিহাসের শুরু। তিনি ভেবেছিলেন আলো যেহেতু কণাধর্মী তাই মোমের আলো সরলরেখা বরাবর ছিদ্র দুটি পার হয়ে পেছনের দেয়ালে দুটো নির্দিষ্ট বিন্দুতেই পড়বে।
কিন্তু মোমবাতি জ্বালানোর পর ইয়ং যা দেখতে পেলেন সেটা কল্পনাতীত। আলো তার কণাতত্ত্ব অনুযায়ী পেছনের দেয়ালে ঠিক দুটো উজ্জ্বল আলোক বিন্দু তৈরি করেনি, তৈরি করেছে অনেকগুলো আলোর বিন্দু। যেনো আলো ছড়িয়ে পড়েছে পেছনের দেয়ালে। প্রতিটা আলোক বিন্দুর মাঝে একটা অন্ধকার বিন্দুও (ছায়া) তৈরি হয়েছে আবার। অর্থাৎ প্রথম দেয়ালে দুটো ছিদ্রের মাঝখান দিয়ে মোমবাতির আলো পেছনের দেয়ালে আসার কথা না, তবুও পেছনের দেয়ালে সেই জায়গাতে আলো দেখা যাচ্ছে।
ইয়ং এই এক্সপেরিমেন্ট থেকে সিদ্ধান্তে আসলেন যে আলো আর যাই হোক কণা হতে পারে না। শুধুমাত্র তরঙ্গ হলেই আলো এই ধর্মটা দেখাতে পারে। কারন যেকোনো তরঙ্গ যখন খুব ছোট ছিদ্র দিয়ে পথ অতিক্রম করে তখন সেটা ছড়িয়ে যায়। তাই হাইগেনের তরঙ্গতত্ত্ব আবারো বিখ্যাত হতে শুরু করে ইয়ং এর এক্সপেরিমেন্টের হাত ধরে।
ক্রাশ স্কুলের নোট গুলো পেতে চাইলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে-
www.facebook.com/groups/mycrushschool
অথিতি লেখক হিসেবে আমাদেরকে আপনার লেখা পাঠাতে চাইলে মেইল করুন-
write@thecrushschool.com
Related posts:
- আলোর তরঙ্গতত্ত্ব
- গসাগু কাকে বলে
- গ্যালিলিও গ্যালিলি
- জড়তা কাকে বলে
- জুল-থমসন পরীক্ষা
- তড়িৎগ্রস্ততার সুনিশ্চিততর পরীক্ষা
- নিউটনের তৃতীয় সূত্র
- নিউটনের প্রথম সূত্র ব্যাখ্যা
- নিকোলাস কোপার্নিকাস
- বাস্তব গ্যাসের জন্য অ্যামাগা’র পরীক্ষা
- বিভব শক্তি (Potential Energy)
- বিভিন্ন প্রকার ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া
- মাইকেলসন-মর্লির ইন্টারফেরোমিটার
- রকেটের গতি (Motion of Rocket)
- রাদারফোর্ড পরমাণু মডেল